একে অন্যের প্রতি যত্ন, সম্মান, শ্রদ্ধাপূর্ণ আচার-আচরণ চর্চার জন্যে কিছু ভাবনার দিক বিবেচনায় রাখার প্রস্তাব করে নিরিখ।
এখানে তার কিছু উল্লেখ করা হলো। এই তালিকাতে যোজন-বিয়োজন চলবে।
আলাপ-পরিচয়/ আড্ডা- অনুষ্ঠান/সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে আদব
সম্বোধন
সম্বোধন/ডাক/পরিচিতির ব্যাপারে যার যার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা/ রুচি/ইচ্ছাকে শ্রদ্ধা করা- মানে, নিজেকে যে নামে বা যেভাবে ডাকা/সম্বোধন করা হোক বলে কেউ চান, তাকে সেই নাম/সম্বোধন/পরিচয়ে ডাকা। জেন্ডার সংবেদনশীলতা কাম্য। ভাষা, বাক্য ও শব্দ ব্যবহারে সংবেদনশীল/বিবেচক থাকা।
স্পর্শ
সম্মতি সাপেক্ষে।
ক্ষমতাবস্থান( positionality), লিংগ/জেন্ডার ও অন্যান্য
লিঙ্গ / জেন্ডার, সক্ষমতা( এবিলিটি/ডিসেবিলিটি), সম্পর্ক, বয়স, পেশাসহ নানারকম সামাজিক-শারীরিক- সাংস্কৃতিক ক্ষমতামাত্রা/ বৈশিষ্ট ইত্যাদি থেকে পাওয়া সুবিধা/প্রিভিলেজ/পজিশনালিটি সম্পর্কে অবগত থাকা, এসবের সুবিধা না নেয়া।
ট্রমা
সকলের/বিভিন্নজনের ট্রমা/মানসিক/শারীরিক সংবেদনশীলতাকে শ্রদ্ধা করা, সেসব নজরে/বিবেচনায় রাখা। ভুলে/ অসাবধানতাবসত এমন পীড়াদায়ক কথা/আচরন হইলে পরিষ্কারভাবে/ যথাযথভাবে ক্ষমা চাওয়া।
দেশকালপাত্র
সকল রকম আচার-আচরণে দেশকালপাত্র বিবেচনায় রাখা।
বলা না বলা, ভাবা-না-ভাবা
- একজনের কথার উপরে আরেকজন না বলা। সবার কথা শোনা। অন্যের কথা শোনা। একজনের মাঝে অন্যরা সেই কথা নিয়ে কৌতুক করা বা যৌনবাদী( যা পুরুষতান্ত্রিক) বা অন্যকোনোরকম অমর্যাদাকর মন্তব্য করা বা কোনোভাবে কারো কথাকে হালকা/অগুরুত্বপুর্ণ প্রমাণের চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকা।
- দ্বিমত থাকলেও সকল মত/অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেয়া, শ্রদ্ধা করা। সবার কথা/মত শোনা-জানা যায়- এমনভাবে আলাপের কাঠামো এবং সময়ের হিসাব ঠিক করা।উচ্চস্বর/চিৎকার/’আবেগী’ প্রকাশকে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার না করা। ‘আবেগ’ও এক ধরণের ক্ষমতা, ফলে এর ন্যায্য অনুশীলনের ব্যাপারে খেয়াল রাখা দরকার।
- অন্যের কথার নিজের সুবিধামত ব্যাখা না দিয়ে দরকারে পরিষ্কার করে নেয়া, জিজ্ঞাসা করে নেয়া। এদিক ওদিক মন গড়া ভাষ্য না দেয়া; ভুল তথ্য এবং নিজের মত করে তথ্য না দেয়া;, কথা না লাগানো, কানপড়া প্র্যাক্টিস না করা। কারো কথা কারো আন্দাজে অর্থ ধরে/ এজিউম না করে পরিষ্কার/ কঙ্ক্রিট তথ্য/ মত জেনে নিয়ে কথা বলা জরুরী। ‘গ্যাস লাইটিং’ এবং ‘ম্যানস্প্লেইনিং’ পরিহার করা অবশ্য কর্তব্য।
- নিজের মত/ চিন্তাকে সকলক্ষেত্রে সবসময় চিরন্তন / বিশুদ্ধ/ ১০০ভাগ সঠিক/ চরম সত্য বলে মনে না করা জরুরী। তেমনি, দ্বিমত হলেই শ্রত্রু পক্ষ নয়, সব বিষয়ে দ্বিমত চিরস্থায়ীও নয়, সুস্থভাবে দ্বিমত চর্চাসহ একসঙ্গে চলা যায়, শান্তি এবং আনন্দসহই চলা যায়।
- বহু-মানুষ, বহু রকম অভিজ্ঞতা, বহু রকম বেদনা- এটা যেমন সত্য, তেমনি, বহুর চেষ্টায় সম্মিলিত জ্ঞান আর প্রজ্ঞা হাজির করে শান্তি, আনন্দ আর মঙ্গলজনক সমাধান, মত/পথ/ পদ্ধতি রচনা/ অনুশীলন করা সম্ভব। দরকার সকলের প্রতি সকলের শ্রদ্ধাসহ শোনা, শেখা এবং নিজেদের পরিবর্তনের মুক্তিদায়ি, আনন্দদায়ি চর্চা করা।
- শ্রদ্ধা, বিনয়, নম্রতাসহ সততার সাথে স্পস্টবাদিতার চর্চা করা জরুরী। ছোট-বড় সবাই সবাইকে শ্রদ্ধা করা, নিজের প্রতি অন্যের শ্রদ্ধার ঘাটতি ঘটায়- এমন আচরন না করা আবশ্যক। ভুল করলে সরি বলা, শেখা এবং নিজেকে শোধরানোর বিকল্প নাই। ক্ষমা করতেও শেখা দরকার। আন্তরিক ভাবে ‘সরি’ বলা’ এবং ক্ষমা করার মাধ্যমে শরীর-মনের খুব উপকার হয়, পারস্পারিক আস্থা বাড়ে, ভালোবাসার বন্ধন শক্তিশালী হয়।
[ ‘জনপরিসরে শিষ্টাচার’ বিষয়ে লোকায়ত বিদ্যালয়ের প্রস্তাবনা সমর্থন করে নিরিখ। ]