ভূমিকার বদলে
কয়েকটা ভাবনা বিন্দু উল্লেখ করি, যেগুলা বিবেচনায় রেখে পাঠকরা এই তালিকা থেকে পরামর্শ নিতে পারেন, তাতে অনেক ফায়দা হবে বলে এই অধীনের মনে হয়। যথাঃ
১
শরিয়া গোষ্ঠী বিশেষের বোধগম্যতা এবং ভাষ্য-ব্যাখার অধিকারের এলাকা কিনা। দ্বীন- ধর্ম- উপাসনা, ইসলাম এবং শরিয়ার বোঝাপড়া কোনো এলিটতন্ত্র বা কায়েমী স্বার্থগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা কিংবা রাখা ইনসাফ ও মঙ্গলজনক কিনা। সমাজের সব অংশে এসবের বহুমাত্রিক, ইনসাফি বোঝাপড়ার চর্চা জারি থাকা জরুরি কিনা। বাংলাদেশ অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক বাস্তবতা বিবেচনায়, সমাজ- সংস্কৃতি- রাজনীতি নিয়া ভাবিত, পন্থী- নাপন্থী, শান্তি, ইনসাফ ও মঙ্গলকামী সবারই শরিয়া এবং ইসলাম সম্পর্কে সম্যক বোঝাপড়া থাকা জরুরি কিনা।
২
দ্বীন, ধর্ম, উপাসনার প্রাচ্যবাদী- প্রতিপ্রাচ্যবাদী, ঔপনিবেশিক আধুনিকতা প্রভাবিত বোঝাপড়ার ইতিহাস, তার সমস্যা।
৩
পশ্চিমা উপনিবেশ ও শরিয়ার ‘আধুনিকতা’ প্রভাবিত ধারণা বিকাশের ইতিহাসের মধ্যেকার সম্পর্ক।
৪
‘বাঙ্গালী মুসলমান’ সমাজে ইসলাম, দ্বীন ও শরিয়া বোঝাপড়ার ধরণ ও বিবর্তন; উৎস, প্রভাবক ও প্রভাব।
৫
‘বাংলা’, ‘বাংলাদেশ’ অঞ্চলঃ বহু ধর্ম, বহু জাতি, বহু ভাষা, বহু জ্ঞানের পরম্পরা; এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রভাবিত বাঙ্গালী মুসলমান সমাজ- তার সামাজিক- রাজনৈতিক পরিবর্তনের ধারা- প্রক্রিয়া, জাতি/পরিচয়বাদী রাষ্ট্রপ্রকল্প ও সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ- এর সমস্যা।
৬
বাংলাদেশ রাষ্ট্র, ‘বৈশ্বিক’ ও ভৌগলিক রাজনীতি, পরিচয়বাদের সমস্যা এবং মজলুমের পরিচয় নীতির প্রশ্ন।
৭
‘সেক্যুলার’- ‘এন্টিসেক্যুলার’ ইত্যাদি বাইনারি বা জোড়- বিপরীতকরণের সমস্যা।
৮
জুলুমশাহীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম, সাম্য- ইনসাফের সমাজ- দেশ- বিশ্ব চাওয়ার সাথে ইসলাম ও শরিয়ার ঔপনিবেশিক আধুনিকতা প্রভাবিত রাষ্ট্রবাদী- পরিচয়বাদী বুঝ থেকে মুক্ত হবার সম্পর্ক ও জরুরত।
#
কোনো ‘শ্রেষ্ঠ‘, ‘অতুলনীয়’, ‘অপরিহার্য’, ‘আদি’, ‘ আসল’, ‘প্রাচীন’, এবং ‘অথেন্টিক’ রচনা বা পাঠের নাম- ধাম দেয়া এই তালিকার উদ্দেশ্য নয়। বরং, দ্বীন- দুনিয়া- সমাজ- সংস্কৃতি জানা- বোঝার জন্যে সাম্প্রতিক ইলমি- তাত্ত্বিক- দার্শনিক বিকাশের নানা ধারা থেকে রচিত/সংকলিত রচনা ও পাঠের থেকে বর্তমান সংকলকের বিবেচনায় প্রাসঙ্গিক কিছুর তালিকা এটা।
এই তালিকার শেষের দিকে জাহেলিয়া ও ইসলামের আবির্ভাব কালের ইতিহাস বিষয়ে একটা স্বতন্ত্র রিডিং লিস্ট, ইসলাম সম্পর্কে সম্যক বোঝাপড়ার জন্যে কাজে লাগতে পারে- এমন একটা স্বতন্ত্র রিডিং লিষ্ট এবং সেক্যুলারিজম বিতর্ক বোঝাপড়ার জন্যে একটা স্বতন্ত্র রিডিং লিষ্ট দেয়া আছে। আগ্রহী পাঠকেরা সেসব পরামর্শ করতে পারেন। দ্বীন- ধর্ম- উপাসনা- রিলিজিয়নের পরিচয়- পর্যালোচনা বিষয়ে আলাদা রিডিং লিষ্ট-ও অচিরেই ‘লোকায়ত’ সাইটে পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করি।
আর, আমাদের স্থানীয় ভাষাগুলাতে শরিয়া সম্পর্কে পর্যালোচনামূলক আলাপ- আলোচনা, বই- পত্র অনুবাদও লিখিত হওয়া দরকার। পাঠক- গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম এ ব্যাপারে।
তালিকা ও পাঠপদ্ধতি প্রসংগে গৎবাঁধা আলাপঃ
মনে রাখতে হবে- এই তালিকার নির্মাণটা নানাদিক থেকে সীমাবদ্ধ কিন্তু চলমান। এতে যোজন-বিয়োজন ও পরিমার্জন চলতে থাকবে বা তার দরকার থাকবে। যেসব জিনিসপত্রের নাম দেয়া আছে- তার সব অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাজানো আছে- এমন না। সহজ- কঠিনের ক্রমানুসারেও সাজানো নয় এই তালিকা। এসবই পাঠকের বিবেচনা ও অগ্রাধিকারের আওতায়।
তালিকা টা প্রাথমিক একটা সূত্র হিসেবে হাতে রেখে পড়াশুনা করতে গিয়ে পাঠক নিজেই তার নিজের অগ্রাধিকার পাঠের তালিকার দিকে যেতে পারবেন বা যাবেন বলে আশা করি।
পরামর্শ থাকবে- একটা বা দুইটা কোনো জিনিস পড়ে- শুনে সিদ্ধান্ত বা মত চুড়ান্ত না করার। ভিন্নমতগুলির সাথে চেনা- জানার চেষ্টা খুব কাজের। এটা বিবেচনায় রেখে চেষ্টা আছে এই তালিকা যথাসম্ভব ভারসাম্য ও পর্যালোচনামূলক রাখার। কোনো মত বা সিদ্ধান্ত প্রস্তাব করা বা চাপিয়ে দেয়া এই তালিকার উদ্দেশ্য নয়। বরং, একটা সামগ্রিক পর্যালোচনার তদবির যেন সমাজে চলে- সেটাই এর প্রধান উদ্দেশ্য।
তালিকায় উল্লেখ করা এই পর্যায়ে সম্ভব হচ্ছে না, কিন্তু, একেক রচনার/ টেক্সটের একেক রচনা সময়, অঞ্চল বা প্রেক্ষিত। তার আগে পরে, বিভিন্ন অঞ্চলে সে বিষয়ে আরো অনেকের অনেক কাজ থাকতে পারে বা আছে- সেসবের সাথে পরামর্শ করা জরুরী, তা না হলে কোনো রচনার ওপর অবিচার করা হতে পারে।
পরম করুণাময় আমাদের সবরকম জুলুমমুক্ত দুনিয়া গড়বার তৌফিক দিন।