দ্বীন ধারণার  ঐতিহাসিক বিকাশ – আহমেত টি কারামুস্তাফা

‘দ্বীনের ঐতিহাসিক বিকাশ তার কোরানিক অর্থ থেকে বহু বহু গুণে জটিল। ইসলামের পন্ডিতদের সহজাত প্রকৃতি হতে পারত পরিভাষাটির অনেকগুলো দিকে ভাগ করে দেয়া গতিপথগুলো খোঁজা। সেই সাথে আরেকটি কাজ হতে পারত মুসলমান সম্ভ্রান্তদের গত অর্ধ সহস্রাব্দ ধরে সৃষ্টি করা কোরান সংক্রান্ত, আইন সংক্রান্ত, ধর্মতাত্ত্বিক এবং আধ্যাত্মিকতা সংক্রান্ত(mystical) বিশেষজ্ঞসুলভ জ্ঞানের বিপুল পাঠগত ধারাগুলোর নানান পথ ও উপপথ সন্ধান করা। এ কাজটা উৎসাহ নিয়ে করার মতো না। এ কাজটা করার জন্য এখনো উদ্যোগ নেয়া হয় নাই, যা হয়েছে খন্ড খন্ডভাবে। যা আমরা ইতোমধ্যে জানি তা প্রস্তাব করছে যে, দ্বীনের উপরে মুসলমান বিশেষজ্ঞরা (ধর্মীয় পন্ডিত এবং আধ্যাত্মিকগণ) মোহাম্মদের নেতৃত্ব দ্বারা আন্দোলনকে ইসলাম হিসাবে আখ্যা দিচ্ছেন এবং তারা এটিকে “সত্য” দ্বীন হিসাবে দেখেন। তাদের চোখে, মুসলমানদের সমাজ(কমিউনিটি) বা মুসলিম উম্মাহ, যে উম্মাহ মানব ইতিহাসে ঈশ্বরের শেষ বড় পরিত্রাণমূলক হস্তক্ষেপের সরাসরি ফলাফল হিসাবে হাজির হয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়, সে উম্মাহ এই জগতের (দুনিয়া) কারবার এবং অপর জগতের (আখিরাত) যাচ্ঞার মধ্যেকার সবচেয়ে কার্যকর সমন্বয়টি হাসিল করেছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি দৃঢ়ভাবে ইসলামকে প্রাধান্য দেয়, কিন্তু অপরের জন্য জায়গা রেখে দেয়। যদিও বেশিরভাগই ঐতিহাসিকভাবে কলুষিত বা ঘাটতিপূর্ণ, কিন্তু তাও দ্বীন নানান বহুত্বকে অনুমতি দেয়। দ্বীনের উপরে এই পান্ডিত্যপূর্ণ দৃষ্টিকোণ নিশ্চিতভাবে আস্তিকতা সমন্ধনীয়, যদিও ইসলামের পন্ডিতরা ঈশ্বরের একটিমাত্র ধারণার ক্ষেত্রে একমত নন। এছাড়াও এই দৃষ্টিকোণ সাধারণত বিশ্বাস ও ন্যায়নিষ্ঠ আচরণের মধ্যেকার সমাহারের উপরে জোর দেয়। মনে রাখতে হবে পন্ডিতেরা এই সমাহারের অনেক ভিন্ন ভিন্ন সূত্র তৈরি করেছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, দ্বীন ব্যক্তি ও সমষ্টি- এই উভয় পর্যায়ে এবং ব্যক্তিগত পরিসরে ও জনপরিসরে নানান রূপরেখায় কাজ করে। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, দ্বীনের ব্যাপারে পান্ডিত্যপূর্ণ ও আধ্যাত্মিক বিশেষজ্ঞরা নিজেরা ঐক্যবদ্ধ নন। মুসলমানদের ইতিহাস জুড়ে অন্তর্গত ইসলামী বৈচিত্র্য একটি স্পষ্ট বাস্তবতা ছিল। তারপরেও, সকল ধরণের বিশেষজ্ঞরা দ্বীনকে যেভাবে কোরানে আসছে, অর্থাৎ একটি প্রাকৃতিক একেশ্বরবাদী মহাজগতে একটি প্রাকৃতিক ঘটনা হিসাবে দেখতেন।’

আহমেত টি কারামুস্তাফা-এর Islamic Din as an Alternative to Western Models of “Religion” প্রবন্ধের একটি অংশ থেকে অনুবাদকৃত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top